ভালবাসার গল্পঃ শেষ স্মৃতি….

ভালবাসার গল্প

-হ্যালো….

-হ্যাঁ বল।

-কি বলব?

-বাহ্! নিজেই না ফোন দিলে….!!!

-হুমমম….!!!

-মানে?

-কি মানে? কিসের মানে?

 

“ধুর” বলেই ফোন কেটে দেয় মিথিলা। শাফিনটা যে কি না। অকারণে কাজের সময় জ্বালায়…!!

 

তিন বছর আগের কথা মনে পড়ে মিথিলার। সেই কলেজে প্রথম দিনেই প্রথম দেখা। শাফিন রিকশা থেকে নেমে দ্রুতপায়ে হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছিল। আর মিথিলাও কোথায় জানি যাচ্ছিল। জোরে ধাক্কা খেয়ে মিথিলা মাটিতে পড়ে যায়। শাফিন বলে,”লাগেনি তো?”!

রাগে শরীর জ্বলে যায় মিথিলার। ধাক্কা দিয়ে আবার লাগেনি তো….!!!! যে যার গন্তব্যে পা বাড়ায়।

 

ক্লাস শুরু হলে চোখাচোখি হতে দুজনের চোখই তো ছানাবড়া…!! সেই না…??!

 

দুই দিন পরে… রিকশা থেকে নামছিল মিথিলা। হঠাৎ খেয়াল করলো ব্যাগে খুচরা নেই!!! হন্তদন্ত হয়ে দোকানে ছুটল। সেখানেও ভাংতি মিলল না। শাফিন গেটে আসতেই বলল,”এই যে! তোমার কাছে খুচরা হবে?”

-কত?

-৫ টাকা

পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে দেয় শাফিন। তারপর, দুজনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লাসে ঢোকে। আস্তে আস্তে নাম জানা, তারপর বন্ধুত্ব বাড়ার সাথে সাথে নাম্বারও জানাজানি হয়। কবে যে প্রেম হয়ে গেল তা জানেনা দুজনের কেউই।

শাফিন পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি নেয়। এরই ফাঁকে মিথিলাও বাড়িতে ফুফুকে দিয়ে বাবা’কে বলিয়ে বিয়ে ঠিক করে নেয় নিজেদের। বিয়ে হয়েও যায় শেষমেশ।

 

এই রকম লাভ স্টোরী কজনের হয়..!!! নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় মিথিলার।

আবার কল…!!!

-এবার কী?

-কী মানে? বাজে কয়টা? ঔষুধ খাইছ? জানি খাওনি। তোমার জ্বালায় চাকরি-বাকরি ছেড়ে ঘরে বসে থাকব।

-হুমমম….!!!! চাকরি ছাড়লে খাবা কি?

-তোমারে চুমু খাবো। হিহিহি!!!

যাও, ওষুধ খাও।

এই সব নালিশ আমার মেয়ের কাছে করব। খালি ওকে আসতে দাও।

 

হ্যাঁ। মিথিলা ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট। আর মাত্র ৪ মাস বাকি। কেমন জানি লাগে তার।

 

প্রতিদিন সকালে শাফিনের সাথে খুনসুটি করে ঘুম ভাঙানো লাগে মিথিলার। দৈনিক সকালে বাচ্চার নাম নিয়ে ঝগড়া করে ওরা। তারপর, খাইয়ে-দাইয়ে অফিস পাঠিয়ে বাড়ির সব কাজ সারে সে। বাড়িঘর সাজায় আপন মনে। নতুন অতিথির আসা নিয়ে কথা……..

 

হঠাৎ একদিন দুপুরে শাফিনকে ফোন দেয় মিথিলা। বুকটা ধক করে ওঠে তার! ও এই অসময়ে…!! ফোন ধরতেই মিথিলা জানায় শরীর খারাপ লাগছে ওর।

শাফিন তক্ষুনি আসতে চায়। মিথিলা বলে পর আসলেও চলবে।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখে মিথিলা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সোজা হাসপাতালে যায় সে…….

 

অপারেশন থিয়েটারের লালা বাতি নিভল। ছুটে গিয়ে শাফিন বলে,”কী হল ড. নজরুল?”

-আপনার মেয়ে হয়েছে।

-মিথিলা কেমন আছে?

-আমি দুঃখিত…!!!

 

আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ে শাফিনের। এমন কি কথা ছিল? এ কি হয়ে গেল?

 

২ বছর পর….

আব্বুউউউউ….!!!! বলে দৌড়ে শাফিনের কোলে আসে মেয়ে নামিরা। তাকে আদরে বুকে জড়িয়ে ধরে শাফিন। এ যে মিথিলার শেষ স্মৃতি। একে বুকে আগলে রাখতেই হবে।

 

Related posts